
কেগেল এক্সারসাইজ কি?
কেগেল এক্সারসাইজ একটি খুবই সাধারণ, তবে অত্যন্ত কার্যকরী ব্যায়াম যা বিশেষভাবে নারীদের জন্য প্যান্টির পেশী বা পেরিনিয়াল পেশী শক্তিশালী করার জন্য করা হয়। এই এক্সারসাইজটি ড. আর্নল্ড কেগেল-এর মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করে, যিনি ১৯৪৮ সালে এই ব্যায়ামের ধারণাটি প্রকাশ করেছিলেন। মূলত, এই এক্সারসাইজটি প্যান্টির পেশী (যেমন মূত্রনালী, জরায়ু, মূত্রথলি) শক্তিশালী করে, যা যৌন স্বাস্থ্য এবং মূত্রনালী সম্পর্কিত অনেক সমস্যা সমাধানে সহায়ক।
কেগেল এক্সারসাইজের উপকারিতা
কেগেল এক্সারসাইজের নিয়মিত অনুশীলন শারীরিক এবং মানসিকভাবে অনেক উপকারে আসে। নিম্নলিখিত কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা:
- সুস্থ যৌন জীবন: কেগেল এক্সারসাইজে প্যান্টির পেশী শক্তিশালী হওয়ার কারণে যৌন জীবনেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটে। শক্তিশালী পেশী যৌন সঙ্গমের সময় বেশি অনুভূতি সৃষ্টি করে এবং মঞ্চনিরোধের জন্য সহায়ক হতে পারে। নারীদের জন্য এটি যৌন সুখ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
- মূত্রনালী স্বাস্থ্য রক্ষা: কেগেল এক্সারসাইজ মূত্রনালী সমস্যা, যেমন মূত্রতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ হারানো (urinary incontinence) প্রতিরোধে কার্যকরী। এটি বিশেষত গর্ভধারণ এবং প্রসবের পর নারীদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হতে পারে, যেহেতু কেগেল এক্সারসাইজ মূত্রনালী পেশীকে মজবুত করে।
- গর্ভাবস্থার পরবর্তী পুনরুদ্ধার: গর্ভাবস্থার সময় মহিলাদের প্যান্টির পেশী দুর্বল হয়ে যেতে পারে, এবং কেগেল এক্সারসাইজ এই পেশীগুলিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে, যা প্রসবের পর পুনরুদ্ধারে সহায়ক। এটি পরবর্তী গর্ভাবস্থায় সুষ্ঠু প্রসবেও সাহায্য করতে পারে।
- মূত্রতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ: যারা বারবার মূত্রত্যাগ করতে চান না, বা মূত্রধারণের সময় চাপ অনুভব করেন, তাদের জন্য কেগেল এক্সারসাইজ অত্যন্ত সহায়ক। এটি মূত্রতন্ত্রের পেশীকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
কিভাবে কেগেল এক্সারসাইজ করবেন?
কেগেল এক্সারসাইজের সঠিক পদ্ধতি জানা জরুরি, যাতে উপকার পাওয়া যায়। নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে কেগেল এক্সারসাইজ করুন:
- পেশী চিহ্নিত করুন: প্রথমে, আপনি কীভাবে আপনার প্যান্টির পেশী চিহ্নিত করবেন তা বুঝতে হবে। মূত্রধারণ করার সময় আপনি যে পেশী ব্যবহার করেন, সেটিই প্যান্টির পেশী। এক্সারসাইজ করতে হলে এই পেশীকে শক্তিশালী করা উচিত।
- ব্যায়াম শুরু করুন:
- শুয়ে পড়ুন অথবা আরামদায়ক অবস্থানে বসুন।
- প্যান্টির পেশী ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত করুন এবং ৫ সেকেন্ড ধরে ধরে রাখুন।
- এরপর ধীরে ধীরে পেশী ছেড়ে দিন এবং ৫ সেকেন্ড বিশ্রাম নিন।
- এই ব্যায়ামটি ১০-১৫ বার পুনরাবৃত্তি করুন।
- প্রতিদিনের এক্সারসাইজ: প্রতিদিন কমপক্ষে ৩-৪ বার কেগেল এক্সারসাইজ করতে হবে। ১ মাসে আপনি এর ফলাফল দেখতে পাবেন, এবং এটি আপনার মূত্রনালী এবং যৌন স্বাস্থ্য উন্নত করবে।
কেগেল এক্সারসাইজের সঠিক নিয়মাবলী
কেগেল এক্সারসাইজ করলে কিছু নিয়ম পালন করা জরুরি:
- ধীরে ধীরে শুরু করুন: প্রথমে বেশি চাপ না দিয়ে ধীরে ধীরে শুরু করুন। এক্সারসাইজে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করবেন না।
- সঠিকভাবে শ্বাস নিন: এক্সারসাইজ করার সময় শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন এবং পেটের পেশী ব্যবহার করবেন না।
- নিয়মিত করুন: এক্সারসাইজ নিয়মিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত কেগেল এক্সারসাইজ করতে হবে।
- বিশ্রাম নিন: এক্সারসাইজের পর বিশ্রাম নিন, যাতে পেশীগুলি শিথিল হতে পারে।
কেগেল এক্সারসাইজের ভুল পদ্ধতি
কেগেল এক্সারসাইজের ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ ভুল হতে পারে, যেগুলো এড়ানো উচিত:
- বেশি শক্তি প্রয়োগ: অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করলে পেশী ক্লান্ত হয়ে যাবে এবং উপকারিতা কমে যাবে।
- মূত্রধারণের সময় এক্সারসাইজ করা: এক্সারসাইজ করার সময় মূত্রধারণ বন্ধ করবেন না। এটি ক্ষতিকর হতে পারে এবং কিডনি সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে।
- এক্সারসাইজের মাঝে বিশ্রাম না নেয়া: এক্সারসাইজ করার পর কিছু সময় বিশ্রাম নেওয়া জরুরি।
কেগেল এক্সারসাইজ একটি সহজ, প্রাকৃতিক এবং কার্যকরী ব্যায়াম যা নারীদের যৌন স্বাস্থ্য এবং মূত্রনালী স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এটি নিয়মিত করার মাধ্যমে আপনি আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে শক্তিশালী রাখতে পারেন। কেবলমাত্র সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে কেগেল এক্সারসাইজ করলে আপনি সুফল পাবেন।